সাম্প্রতিক কালে গ্রিসের অর্থনীতির টানাপড়েন সবার নজরে এসেছে। এ টানাপড়েন শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। এর মধ্যে তৃতীয় গ্রিক সরকার ক্ষমতায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপরাস সর্বশেষ ক্ষমতায় এসেছেন গত জানুয়ারিতে। ২০০৯ থেকে গ্রিস জনতা মোট তিনবার ভোট দিয়েছেন সরকার পরিবর্তনে। কিন্তু সমস্যা কাটছে না। ২০০৯ সালে যেখানে ক্ষমতায় ছিল পাসোক পার্টি (বামঘেঁষা তবে মধ্যপন্থী দল), সেখানে ২০১৫ সালে নির্বাচনে জিতেছে সিরিজা পার্টি (বিপ্লবী বাম দলগুলোর মোর্চা)। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এ মুহূর্তে গ্রিসের সব ব্যাংক বন্ধ। লেনদেন স্তব্ধ। অর্থনীতি পঙ্গু। কী করে হলো এই অঘটন? তা থেকে কি আমরা কিছু শিখতে পারি? তা নিয়েই এই নিবন্ধ।
১৯৮১ সালে গ্রিস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়। ২০০১ সালে গ্রিস প্রবেশ করে ইউরোজোনে। তখন গ্রিসের অবস্থা ছিল অত্যন্ত ভালো। ২০০১ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে দেশটির মাথাপিছু আয় প্রায় তিন গুণ হয়ে যায় (১২০০০ ডলার থেকে ৩১০০০ ডলার)। উন্নয়নের জোয়ার চলছিল গ্রিসে। এর মধ্যে গ্রিস সরকার তাক লাগানো অলিম্পিক গেমসের আয়োজন করে ২০০৪ সালে। অলিম্পিক গেমসের জন্য গ্রিসে প্রচুর বিনিয়োগও হয়। প্রচুর ঋণও নেয় সরকার। গ্রিসের বিপদ হয় ২০০৭-০৮ সালের আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকটের মধ্যে। বৈশ্বিক মন্দা দেখা দেয়ায় গ্রিসের আয় (পর্যটন শিল্পে) হ্রাস পায়। গড় জাতীয় আয় প্রায় ২০ শতাংশ কমে যায়। গ্রিসের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো পর্যটন শিল্প। যার বেশির ভাগ পর্যটক আসে ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে। ইউরোপ ও আমেরিকার অর্থনীতিতে আর্থিক মন্দা দেখা দেয়ায় হঠাৎ করেই বিপর্যয় নেমে আসে গ্রিসের অর্থনীতিতে। বলা বাহুল্য, ২০০১ থেকে গ্রিসে অলিম্পিক গেমসকে সামনে রেখে পর্যটন শিল্প উন্নয়নে সরকার প্রচুর ঋণও নেয়। প্রচুর বিনিয়োগ হয় অর্থনীতিতে। বেড়ে যায় পর্যটন আর সেসঙ্গে বাড়ে মাথাপিছু আয়।
২০০৯ সালে গ্রিসের অর্থনীতিতে প্রথম আঘাত আসে। সে সময় দেশটির বাজেট ঘাটতির পরিমাণ জাতীয় আয়ের প্রায় ১৩ শতাংশে পৌঁছে যায়। বাজেটে বিরাট ঘাটতি দেখা দেয়ায় গ্রিস সরকারকে নতুন করে ঋণ গ্রহণ করতে হবে। অথচ ইউরোজোনে বাজেট ঘাটতির উচ্চমাত্রা ৩ শতাংশে বেঁধে দেয়া হয়েছে। বাজেট ঘাটতি মানে নতুন ঋণ গ্রহণ। বেঁধে দেয়া মাত্রার প্রায় ১০ শতাংশ বেশি ঘাটতি থাকায় গ্রিসের আর্থিক দুরবস্থা সবার নজরে আসে। এ দেশে বিনিয়োগ হয়ে পড়ে বিপজ্জনক। তাই বিভিন্ন এজেন্সি গ্রিসের ঋণ গ্রহণের ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। গ্রিস তার ঋণ গ্রহণের ‘এ’ রেটিং থেকে নামতে থাকে। ২০০৯ সালে হয় ‘এ-’। ফিচ, স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড পুওর’স, মুডি’স সবাই গ্রিসের ঋণঝুঁকি বাড়ছে বলে দেশটির ক্রেডিট রেটিং কমিয়ে দেয়।
রেটিং কমে যাওয়া মানে হলো, সব বিনিয়োগকারীকে জানিয়ে দেয়া যে, এ অর্থনীতিতে ঝুঁকি বাড়ছে। বিনিয়োগ নিরাপদ নয়। আর বাজেট ঘাটতি অগ্রহণীয় হওয়া মানে, সরকারের সাহায্য করার ক্ষমতাও নিঃশেষিত। যারা গ্রিসে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের পক্ষে অর্থ নিয়ে বেরিয়ে যাওয়াও কঠিন। বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার তাই ব্যয় সংকোচনের চিন্তা করে। বাধ্য হয়ে ২০১০ সালে গ্রিস সরকার প্রথম কৃচ্ছ প্যাকেজ ঘোষণা করে। কী সেই প্যাকেজ? সব সরকারি কর্মচারীর (বাংলাদেশের পরিভাষায় কর্মকর্তা ও কর্মচারী) বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বন্ধ, তাদের বোনাস বা উৎসব ভাতা ১০ শতাংশ হ্রাস আর সব ওভারটাইম ভাতা বাতিল। কিন্তু তাতেও বাজেট ঘাটতি খুব একটা কমল না। সরকার এক মাসের মাথায় বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় কৃচ্ছ নীতি ঘোষণা করে। কী আছে তাতে? এবার বলা হলো, নতুন কোনো পেনশন হবে না (অর্থাৎ যারা পেনশনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তাদের পেনশন গ্রহণ আপাতত বন্ধ), ভ্যাটের হার ২১ শতাংশ বাড়ানো আর সবার বেতন কমিয়ে দেয়া হয়। বুঝতেই পারছেন, সরকারের বাজেট ঘাটতি হলে উত্তরণের পথ সীমিত হয়ে যায়। প্রয়োজন হয় ট্যাক্স বাড়ানো বা খরচ কমানো কিংবা দুটোই।
ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠানগুলোও তাতে সংকট উত্তরণের পথ দেখতে পায় না। গ্রিসের রেটিং আরো কমিয়ে দেয় তারা। এর এক মাসের মাথায় সরকার বাধ্য হয়ে (এপ্রিল ২০১০) হাত পাতে ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইএমএফের কাছে— উদ্ধারের আশায়। প্রায় এক মাস আলোচনার পর ১৪৩ বিলিয়ন ডলারের তিন বছরে পরিশোধযোগ্য একটি ঋণ গ্রহণ করে গ্রিস সরকার। পাশাপাশি তিন বছরে এ অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য তৃতীয় ব্যয় সংকোচন বা কৃচ্ছ নীতি ঘোষণা করে গ্রিস সরকার। পেনশনের বয়স ৬০ থেকে ৬৫ করা হয়। নতুন করে পেনশন নীতি ঘোষণা করা হয়। সেসঙ্গে দেখা যায় যে, গ্রিসের জাতীয় আয়ের প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত এই দেনা শোধ করতে ব্যয় হবে। খুব বেশি দিনের ঘটনা নয় এগুলো। রমরমা দেশ ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০১০ সালের মে মাসের মাথায় এ অবস্থায় পড়েছে। যেন তাসের ঘর।
এত দিনে জনগণের নাভিশ্বাস। বেতন কমেছে। বিনিয়োগকারীরা দেশ ছাড়ছেন। বেকারত্ব বাড়ছে। সব মিলিয়ে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা গ্রিসে। শুরু হলো দাঙ্গা। ২০১০ সালে ডিসেম্বরে সরকার আবার নতুন সংকোচন নীতি ঘোষণা করে। এবার বেতন কমে সব সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা সরকারি কর্মচারীদের। অবস্থার (বাজেট ঘাটতি) কোনো উন্নতি পরিলক্ষিত হয় না। সরকারের কর আহরণ আর ব্যয় সংকোচনের ক্ষমতা ক্রমে সীমিত হতে থাকে। সরকার চতুর্থ ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে। কর আবারো বাড়ানো হয় আর এবার শ্রমিকের বেতন কমানো হয়। প্রবল আন্দোলনের মুখেও পার্লামেন্ট বাধ্য হয় এ নীতি পাস করতে। তাতেও অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয় না। ২০০১-২০০৮ সালের অপরিণামদর্শী উন্নয়ন ব্যয়ের ফলে সরকারের দেনার পরিমাণ বেড়েই চলছে। ২০১১ সালে জুনে গ্রিস ক্রেডিট রেটিংয়ের তলানিতে পৌঁছে যায়। এবার ধাক্কা আসে বেসরকারি খাতে। গ্রিসের স্টক মার্কেট ভেঙে পড়ে। সূচক ১ হাজারের নিচে চলে যায়। বিনিয়োগকারীরা এ অবস্থায় তাদের প্রাপ্য অর্থের ৫০ শতাংশ নতুন ঋণ হিসেবে দেয়ার ঘোষণা করেন। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয় না। আন্দোলন বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে সরকারের দেনার দায়ও।
রাজনীতির মারপ্যাঁচে সরকার সব দায় চাপিয়ে দেয় জার্মান ও ফ্রান্স সরকারের ওপর। সরকারও পড়ে নাজুক অবস্থায়। তাই ২০১১ সালের নভেম্বরে পাপোন্দ্র সরকারের পতন হয়। মধ্যপন্থী বামঘেঁষা নতুন সরকার ক্ষমতায় আসে। জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের মাঝেই নতুন সরকার পাস করে পঞ্চম ব্যয় সংকোচন নীতি। আবারো হাত পাতে আইএমএফ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ইউরোপীয়) কাছে। নতুন করে ২০১৬ পর্যন্ত আর্থিক ঋণ পায় ২৪৬ বিলিয়ন ইউরো। যা জাতীয় আয়ের ১৩৫ শতাংশ। এদিকে গ্রিস সরকারের দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্রের (সঞ্চয়পত্র জাতীয়) প্রায় ৪৪ শতাংশেরই পরিশোধ অসম্ভব হয়ে পড়ে। আন্দোলন আরো প্রকট হয়। তাই মাত্র ছয় মাসের মাথায় এ সরকারেরও পতন ঘটে। ৬ মে ২০১২ সালে নতুন নির্বাচন হয়। গঠিত হয় ঝুলন্ত পার্লামেন্ট। সরকার গঠনে সবাই ব্যর্থ হয়। প্রায় এক মাস ১০ দিন পর ১৭ জুন আবারো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আবারো আসে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট। তবে এবার ক্ষমতায় আসে নতুন জোট। মধ্য-ডানপন্থী দলের নেতা অ্যান্থনিস সামারাস হন নতুন প্রধানমন্ত্রী। পাঁচ মাস পর নতুন সরকার ষষ্ঠ ব্যয় সংকোচন নীতি ঘোষণা করে, যাতে তারা ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত অর্থের ছাড় পায়। নতুন ব্যয় সংকোচন নীতিতে পেনশন বয়স আরো দুই বছর বাড়িয়ে ৬৭ বছর করা হয়। পেনশনারদের উৎসব ভাতার ১০ শতাংশ হ্রাস করা হয়। সরকারি কর্মচারীদের বেতন কমানো হয় আরো ২০ শতাংশ। শ্রমিকের মজুরি কমানো হয় ৩০ শতাংশ।
আরো ছয় মাস পর ২০১৩ সালের এপ্রিলে সরকার ব্যয় কমাতে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ১৫ হাজার কর্মচারীকে ছাঁটাই করার ঘোষণা দেয়। ব্যয় কমাতে সরকার রাষ্ট্রীয় বেতারের সব সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় বামপন্থী শরিক দলগুলো জোট ত্যাগ করে। তবে সরকার টিকে যায়। প্রায় তিন মাস পর জুলাইয়ে সরকার ব্যয় সংকোচনের সপ্তম নীতিমালা ঘোষণা করে। এবার বেতন আরো কমিয়ে দেয়া হয়। হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা আসে। তবে গ্রিস সরকার প্রথমবারের মতো ১ দশমিক ৫ শতাংশ উদ্বৃত্ত বাজেট ঘোষণা করে। সেসঙ্গে ৩ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের নতুন বন্ড বাজারে ছাড়ে। গ্রিস সরকারের ক্রেডিট রেটিংও বেড়ে যায়।
প্রায় একই সময় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল হেরে যায়। এর প্রায় ২০ দিনের মাথায় সিরিজা পার্টি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে গ্রিস থেকে নির্বাচিত হয়। প্রায় ছয় মাস পর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে গ্রিসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল হেরে যায়। সরকারের পতন ঘটে। ২৫ জানুয়ারি ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচনে জয়ী হয় সিরিজা পার্টি। অ্যালেক্সিস সিপরাস হন প্রধানমন্ত্রী আর ইয়ানিস ভারোফাকিস হন অর্থমন্ত্রী। নির্বাচনের পর চার মাসের মধ্যে অর্থ ছাড়ের নতুন একটি চুক্তি হয় ইউরোজোনের সঙ্গে। নতুন প্রধানমন্ত্রী এ চুক্তির অর্থগ্রহণের সময় পিছিয়ে দেন। অনুষ্ঠিত হয় চুক্তি-সংক্রান্ত গণভোট। ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত গণভোটে ৬১ শতাংশ গ্রিসবাসী এর বিপক্ষে ভোট দেন। অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস পদত্যাগ করেন। এ নিবন্ধ যখন লিখছি তখন ৮ জুলাই, গ্রিসের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ। গ্রিসের অর্থনীতি স্থবির।
ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করার কারণ অনেকগুলো। প্রথমত. সরকারের বাজেট ঘাটতি যে কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, সে সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি করা। দ্বিতীয়ত. ঋণের দায় একবার হাত ছাড়া হয়ে গেলে তার ভার কত বেশি হতে পারে তা বোঝা। তৃতীয়ত. গ্রিস সরকারের শনৈঃশনৈঃ উন্নয়নের ঢেউ (২০০১-২০০৮ সময়ে) কতটা অন্তঃসারশূন্য ছিল তা আন্দাজ করা। চতুর্থত. ঋণ করে বেতন বৃদ্ধি আর উন্নয়নের জোয়ার দেখাতে অলিম্পিক গেমসের মতো খেলায় পৃথিবীকে তাক লাগাতে গিয়ে গ্রিসের অবস্থা কোথায় গেছে, তা স্পষ্ট করা। পঞ্চমত. ২০০১-০৮ সময়ে বেতন বাড়িয়ে তিন গুণ করার ফলাফল জাতি ও রাজনীতিবিদদের জন্য কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, তা দেখিয়ে দেয়া। সর্বশেষে বলা বাহুল্য যে, গ্রিস সরকারের বাজেট ঘাটতি হঠাৎ কী করে ১৩ শতাংশে পৌঁছেছিল, তা অনুসন্ধান করা। দুর্ভোগের মূল কারণই ছিল অপরিপক্বতা। যেখানে ইউরোজোনে এ বাজেট ঘাটতির উচ্চমাত্রা নির্ধারিত ছিল ৩ শতাংশ, সেখানে কী করে তা রাতারাতি ১৩ শতাংশে পৌঁছে গেল? গ্রিসে কর দেয়ার ক্ষেত্রে জনগণের অনীহা ছিল খেলা করার মতো। না দিতে পারলেই খুশি। গ্রিসের রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি, কর আহরণে সরকারের ব্যর্থতা, অডিট ব্যবস্থায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করা, সরকারি অফিসে অদক্ষতা, সরকারের দায়িত্ব পালনে অস্পষ্টতা, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের দায়িত্বহীনতা ও আইনের প্রতি অবহেলার মাত্রা ছিল অত্যন্ত প্রকট। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, ৯০ শতাংশ গ্রিসবাসী মনে করে যে, তাদের রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিগ্রস্ত বা ভীষণ দুর্নীতিগ্রস্ত। প্রায় অর্ধেক জনগণ মনে করে যে, সরকার দুর্নীতি দূর করতে আগ্রহী নয়। এসবেরই পরিণতি হলো বর্তমান গ্রিস অর্থনীতি।
এ গোলকধাঁধা থেকে মুক্তির কয়েকটি উপায় আছে। এক. ঋণের দেনার দায় থেকে গ্রিসকে মুক্তি দেয়া। তা সম্ভব হবে যদি ঋণদাতারা ‘ফি সাবিলিল্লাহ’ করে সবকিছু ভুলে যায়। অর্থাৎ গ্রিসকে দায়মুক্ত করা। এ অবস্থার অন্য দিক হলো, ঋণদাতাদের পক্ষে দায় গ্রহণ করা। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের দায় অন্য দেশের জনগণ কেন গ্রহণ করবে, তা ভেবে দেখার মতো। দুই. যেহেতু গ্রিস ইইউ অন্তর্ভুক্ত দেশ, তাই যদি অন্য দেশগুলো দেনার ভার নিজেদের করদাতাদের ওপর চাপাতে পারে, তবেই এ দায়মুক্তি সম্ভব। তবে আমার ধারণা, অন্য দেশের করদাতারা এ দায় নিতে আগ্রহী হবে না। বিশেষত যেখানে গ্রিসের এই পরিণতির মূল দায় দেশটির করদাতাদের। তারা যেখানে কর দিতে অনাগ্রহী বা কর ফাঁকি দিতে অধিকতর আগ্রহী, সেখানে অন্য দেশের করদাতা কেন গ্রিসের করভার গ্রহণ করবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তিন. ইউরোজোনে গ্রিসই একমাত্র দেশ নয়, যার অবস্থা এ রকম। স্পেন ও পর্তুগাল কিংবা ইতালির অবস্থাও প্রায় কাছাকাছি। সবাই সমানতালে কর দিতে অনাগ্রহী। তাই ইউরোজোন গ্রিসের দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিলে অন্যদেরকেও একইভাবে উৎসাহিত করা হবে কিনা, তা ভেবে দেখার মতো। চার. দীর্ঘমেয়াদি ঋণের মাধ্যমে বর্তমান দায় ভবিষ্যতের কাঁধে ফেলে দেয়া। আইএমএফসহ অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। তবে অঙ্ক না কষে বলা যাবে না— এ ব্যবস্থা কতটা টেকসই। সর্বশেষ একটি উপায় নিয়ে গ্রিস বা ইউরোজোন এখনো ভাবছে না বা খোলাখুলিভাবে কথা বলছে না, তা হলো— গ্রিসের কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়া। রাশিয়ার জার যেমন ১৮৬৭ সালে ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার দিয়ে আলাস্কা বিক্রি করেছিলেন, তেমনি গ্রিসের উচিত তার শতাধিক জনমানবহীন দ্বীপ বিক্রয় করে এ দায় থেকে বের হওয়া। আশা করি, গ্রিসের এই দুরবস্থার বর্ণনা থেকে আমরা কিছু শিখতে পারব।
লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি