সম্পাদকীয়
অচল ও কালো টাকার গল্প
তুঘলকি কাণ্ড! হঠাৎ করে সবাই জানতে পারল ৫০০ ও ১ হাজার রুপির নোট অচল। বাংলাদেশে নয়। কাণ্ডটি ঘটেছে ক’দিন আগে ভারতে। দিল্লির সম্রাট মুহাম্মদ বিন তুঘলক যখন দেখলেন তার রাজকোষ খালি, তখন তিনি আদেশ দিলেন— মুদ্রা হবে টোকেন। এর আগে মুদ্রা ধাতব পদার্থ স্বর্ণ বা রৌপ্য দিয়ে তৈরি হতো। তার রাজ্যে অর্থের অভাব দেখা দেয়ায় তিনি যখন ১৪ শতকে ধাতব মুদ্রা চালু করলেন (অনেকটা বেপরোয়া কাণ্ড), তখন দেখা গেল বাজারে প্রচুর নকল টাকা। নকল টাকার ভারে শেষ পর্যন্ত বিপর্যস্ত হয়েছিলেন সম্রাট মুহাম্মদ বিন তুঘলক।
রাতে যখন দিল্লি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখনই জানতে পারলাম যে, ভারতীয় ৫০০ ও ১ হাজার রুপির নোট মাঝরাতে অচল হবে। ভাবলাম আমারো দু-একটা নোট থাকতে পারে! এবার গেল। তবে পাওয়া গেল না। বেঁচে গেলাম। দিল্লি পৌঁছে প্রথমেই গেলাম মানি চেঞ্জারের কাছে— থমাস কুক। কাছাকাছি পৌঁছতেই দেখতে পেলাম লেখা আছে— ‘no change no cash.’ ভাবলাম ওদের হয়তো ক্যাশ নেই। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারলাম যে, কোথাও ক্যাশ নেই। কারো কাছে ১০০ বা তার কম কোনো রুপি নেই। না থাকারই কথা, কারণ ভারতে মোট নোটের প্রায় ৯৫ শতাংশই ছিল ৫০০ কিংবা ১ হাজার রুপির নোট। অর্থাৎ এক রাতেই ৯৫ শতাংশ নোট অচল। আমার অতটা চিন্তা ছিল না, কারণ যারা আমাকে দাওয়াত দিয়েছিলেন, তাদের গাড়ি অপেক্ষা করছিল। হোটেলে চলে গেলাম।
রাতে ডিনার। ডিনারে কথার সময় বুঝতে পারলাম নোটের সমস্যা প্রকট। আমার সঙ্গে ছিলেন ভুটানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তিনি এসেছেন সস্ত্রীক। তার অবস্থা আরো খারাপ। স্ত্রী ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করবেন কিন্তু টাকা নেই। অনেকটা বেকুব বনে গেছেন। তার স্ত্রী অস্বাভাবিক বিনয়ী। সবার সঙ্গে কথা বলছেন। নিজে থেকে এগিয়ে এসে পরিচিত হচ্ছেন। আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি জেনে এগিয়ে এলেন। তখন স্টেজে গান চলছিল। হঠাৎ বাংলা একটি গান শুনে বললেন, ভালো গান। আপনি বাংলা পারেন? হ্যাঁ, আমার গৃহশিক্ষক বাঙালি ছিলেন (ভারতীয়)। বাংলা বোঝেন তবে বলতে অসুবিধা হয়। জানলাম তিনি কেবল গৃহিণী নন, অবসর নিয়েছেন ভুটানের অর্থ সচিব হিসেবে। সে প্রসঙ্গ থাক।
ডিনারের ফাঁকে ফাঁকে কথা চলছিল। ভারতীয় প্রায় সবাই ক্যাশ সংকটে আছে। আমাদের আপ্যায়ন দলে ছিল সঞ্জয় বলে এক যুবক। প্রত্যেক টেবিলেই ছিল একজন করে। আমি অর্থনীতিবিদ জেনে মুদ্রা প্রসঙ্গ এসে গেল। তার মতে, মোদি খুব ভালো ব্যবস্থা নিয়েছেন। ক্যাশ সংকট সাময়িক। তবে আগামীতে আর ভারতে কালো টাকা থাকবে না। জানতে চাইলাম। কীভাবে? বলল, ‘স্যার, নতুন ২ হাজার রুপির নোটে শুনেছি চিপ লাগানো। কারো কাছে তা জমানো থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্যাটেলাইট থেকে জানতে পারবে।’ হেসে ফেললাম। আমার হাসিতে সে বুঝতে পারল, কিছু একটা সমস্যা আছে। বললাম, তোমাকে কে বলল এমন উদ্ভট কথা (আবার তুঘলকি কাণ্ড মনে এসে গেল)? ‘না স্যার, তা-ই বলেছে পত্রিকায়!’ পত্রিকায়? ‘না সম্ভবত ফেসবুকে!’ বুঝতেই পারছেন, অবাক করা এমন উদ্ভট বার্তা কোথায় পাওয়া যায়? জানতে চাইল কেন বিশ্বাস করতে চাইছি না। বললাম, তা যদি সম্ভব হতো তবে আর নোট কেন, চিপসহ একটি কার্ড সবাইকে দিলেই হয়। তাতে বলা থাকবে টাকা পেতে রিচার্জ করো আর টাকা দিতে ডিসচার্জ করো। বেশি নোট ছাপতে হয় না। সহজ সমাধান এবং তা আজকের যুগে সম্ভব।
টেবিলে আরেকজন ভারতীয় বলল, ‘আমিও শুনেছি। তবে মোদি ৫০০ ও ১ হাজার রুপির নোট বাতিল করেছেন কারণ পাকিস্তান প্রচুর ভারতীয় নকল রুপি ছাপিয়ে পাচার করেছে। ফলে সেই নকল রুপি বাতিল করতেই এ ব্যবস্থা।’ আবারো হাসলাম। বলল, ‘স্যার, এবার?’ বললাম, দেখো, পাকিস্তান রুপি ছাপিয়ে তোমাদের অর্থনীতি অচল করে দিতে পারে তাহলে আগামীতেও পারবে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি ভাবে ৫০০ বা ১ হাজার রুপির মুদ্রা পাকিস্তান ছেপেছে, তবে ২ হাজার রুপির নোট আরো বিপজ্জনক। তখন শুধু পাকিস্তান নয়, ভারতেই তা ছাপা হবে। কারণ নোট যত বড় অংকের হয়, ততই তা নকল করার ঝুঁকি বাড়ে। তাই দেখো, ডলারের নোট ১০০ ডলারের বেশি হয় না। অর্থাৎ বড় অংকের লেনদেনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র চায় তা যেন ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। ভারত যদি ২ হাজার রুপির নোট ছাড়ে, তবে তা নকল করার জন্য আর পাকিস্তানি চর লাগবে না, ভারতীয়রাই পারবে। তবে খেয়াল রেখো, তার পরও বিশ্বের সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ডলারের বিনিময়েই হয়।
ততক্ষণে টেবিলের অনেকেই আলোচনা শুনতে উত্সুক। একজন বললেন, ‘মোদি কাজটি করেছেন দেশের স্বার্থে। ভারতে কালো টাকার দৌরাত্ম্য এতটাই প্রকট যে, তিনি আর পারছেন না। তাই কালো টাকা নির্মূল করার জন্যই কাজটি করেছেন। যাদের হাতে কালো টাকা আছে, তারা এখন বিপদে পড়বে।’ কীভাবে? ‘কারণ নিয়ম অনুযায়ী তারা টাকা ব্যাংকে জমা দেবে। সরকার সবার টাকার হিসাব পেয়ে যাবে। আর অর্থ ওঠানোর জন্য নিয়মও বেশ কড়া— যত অর্থই জমা দাও না কেন, একজন দিনে ২ হাজার রুপির বেশি ওঠাতে পারবে না। আর সপ্তাহে ৪ হাজার রুপির বেশি ওঠাতে পারবে না।’ আবারো হাসলাম। টেবিলে সবাই জানতে চাইল, ‘এটা কি ভালো কাজ হয়নি?’
বুঝতে পারছিলাম। মোদির উদ্দেশ্য সম্পর্কে সবাই অবহিত। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই একটি ভালো দিক। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সম্ভবত রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, প্রায় সবাই বিষয়টির প্রশংসা করছে। রাজনীতিবিদ হিসেবে তাকে সফল বলা চলে। প্রধানমন্ত্রীর প্রচারক্ষমতা বেশ ভালো বলেই তার মতামত সবার কাছে পৌঁছেছে। বিশ্বের কম নেতাই আছেন, তা পারেন। রাজনীতিতে সাফল্য ধরে রাখার জন্য যে কয়টি গুণাগুণ প্রয়োজন, তার একটি হলো— জনগণের মনের কথা জানা এবং তাদের অন্তর যা চায়, তার পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনা করা। ভারতীয়রা আমাদের মতোই কালো টাকা নিয়ে চিন্তিত। কালো টাকার দৌরাত্ম্যে তাদের নাভিশ্বাস হচ্ছে। তাই তারা চাইছে কালো টাকা যেন সরে যায়। কিন্তু পদক্ষেপ নেয়ার আগে নিশ্চয় তিনি উপদেশ নেবেন। কারণ সব সরল অংক সহজে সমাধান করা যায় না। এটিও একটি অসমাধানযোগ্য সরল অংক। সবাই জানে কিন্তু সমাধান সহজ নয়।
বললাম, কয়েকটি সহজ সূত্র বলি। প্রথম সূত্র— মানুষ নিজের ভালো বোঝে। দ্বিতীয় সূত্র— যারা অন্ধগলিতে চলে তাদের দৃষ্টিশক্তি যাদের চোখ আছে তাদের চেয়ে বেশি, তাই তারা অন্ধগলিতে চলতে পারে। তৃতীয় সূত্র— সন্ত্রাসীরা পুলিশের চেয়ে একধাপ এগিয়ে থাকে। এবার সূত্রগুলো যোগ করো, দেখতে পাবে উদ্দেশ্য ভালো হলেও শেষ পর্যন্ত সরকার ব্যর্থ হবে। সরকারের ছড়ানো জালে ধরা পড়বে সাধারণ মানুষ আর তখন সরকার নিজেই বলবে ‘ভুল হয়ে গেল’। এজন্যই সরকারের প্রয়োজন সঠিক মন্ত্রণাদাতা। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো যে, আমাদের (ক্ষমতার) চারপাশে থাকে চাটুকার; মন্ত্রণাদাতা নয়। মনে করো, কোনো এক ব্যক্তির অঢেল কালো টাকা রয়েছে। তোমার কি মনে হয় সে টাকা ঘরে সিন্দুকে বা বালিশের তলায় রাখবে? বোকা না হলে কেউ কালো টাকা ঘরে ক্যাশ রাখবে না। আমাদের ১৬ কোটির দেশে একজন ছিল গনি মিয়া, বন সংরক্ষক। তিনি বালিশের নিচে টাকা রেখেছিলেন। বাকিরা টাকা কোথায় রাখবে? ব্যাংকে? যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবার অ্যাকাউন্টের খবর এভাবে রাখতে চেষ্টা করে, তবে তারা টাকা ভরবে স্বর্ণ বা জমিতে। আর তা সম্ভব না হলে টাকা লগ্নিতে খাটাবে। আর তাও সম্ভব না হলে টাকা পাচার করবে বিদেশে। তাই বোকার মতো কালো টাকার পেছনে ছুটলে ধরা পড়ে যাবে অসহায় লোকজন, যারা এখনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেনি; যারা এখনো লেখাপড়া জানে না কিন্তু ছোটখাটো ব্যবসা করে আরামে সংসার চালাচ্ছে; যারা নিত্যদিনের সব কাজকর্ম করে নগদ টাকায়, কোনো ক্রেডিট কার্ডে নয় কিংবা মোবাইল মানিতে নয়। এসব লাখ লাখ লোক, যারা কালো টাকা ঘৃণা করে তারাই দেখতে পাবে— তারা এখন তথাকথিত কালো টাকার মালিক। কালো টাকা দূর করতে চাইলে মূলে যেতে হবে। যত দিন দুর্নীতি চলবে তত দিন কালো টাকা থাকবে। যত দিন করদাতাকে তার আয়ের উেসর রশিদসহ ব্যাখ্যার দরকার হবে তত দিন সবার কাছে কালো টাকা থাকবে। যত দিন মানুষের আয় বিনা রশিদে ক্যাশের মাধ্যমে হবে, তত দিন কালো টাকা থাকবে। কালো টাকা সম্পূর্ণ দূর হবে না, তবে সীমিত করা যায়। কিন্তু তা বাংলাদেশ বা ভারতের মতো দেশে অনেক বেশি কষ্টকর। কারণ আমাদের অর্থনীতির এক বড় অংশ এখনো নগদ লেনদেনে সম্পন্ন হয়।
সর্বোপরি দিল্লির এ সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। ভারতীয় অর্থনীতি বিশ্বের প্রথম সাতটি অর্থনীতির একটি। এ কারণে ভারতের সঙ্গে বিশ্বের লেনদেন বেড়েছে। লেনদেন করার সময় অনেক দেশই তা ভারতীয় মুদ্রায় করতে পারে। যেমন, বাংলাদেশ থেকে কেউ চিকিত্সার জন্য ভারতে যাবে, সে জানে ভারতে তাকে ভারতীয় মুদ্রায়ই তা করতে হবে। সে বাংলাদেশ থেকে ডলার না কিনে ভারতীয় মুদ্রা কিনছে, তাতে তার দুবার মুদ্রা পরিবর্তনের ফি দিতে হবে না। এ কারণে ভারতীয় মুদ্রা ক্রমে বৈশ্বিক মুদ্রায় রূপান্তর হচ্ছে। তার ওপর ভুটান কিংবা নেপাল ভারতীয় মুদ্রা গ্রহণ করে। তাদের মুদ্রা ভারতীয় রুপির সঙ্গে অনুপাত রেখে চলে। সবাই বিপাকে পড়বে। ক্রমে বিশ্বের কেউ ভারতীয় মুদ্রা রাখবে না। আমার জানামতে, বহু ভারতীয় রুপি নিয়ে চলে গেছে বিদেশে। ডলার নিয়ে যায়নি, কারণ যেখানেই যাবে দক্ষিণ কিংবা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায়, সেখানেই সে অতি সহজে রুপি ভাঙিয়ে নিতে পারবে। এখন কী হবে? সবাইকে ডলার নিয়ে যেতে হবে। ডলারের ওপর চাপ বাড়বে। মুদ্রার মান আরো কমবে। সর্বোপরি বিশ্বের একটি বৃহত্তম দেশ হিসেবে তার মুদ্রার গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে ভারতের সঙ্গে অনেক দেশের লেনদেন কষ্টকর হবে। ইরানের কথাই ধরা যাক, বহুদিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের চাপে দেশটি ডলারে লেনদেন করতে পারেনি। তখন ভারত চেয়েছে তার মুদ্রায় যেন লেনদেন হয়। ইরান স্বর্ণে লেনদেন করেছে। কিন্তু ভবিষ্যতে ভারতীয় মুদ্রায় তা হতে পারত। এখন তা সম্ভব হবে না।
একজন বললেন, ‘এটা অবশ্য সাময়িক ব্যবস্থা। আর হবে না।’ হেসে ফেললাম। কী করে জানলে? অর্থ ব্যবস্থার মূলমন্ত্র হলো বিশ্বাস। বিশ্বাস যদি ভঙ্গ হয় তবে কেউ সেই ব্যবস্থায় পা ফেলবে না। দেখতে পাও না নোটের ভেতর সেই বিশ্বাসকে কত স্পষ্ট করে বলা হয়েছে? ৫০০ রুপির নোটে বলা ছিল— ‘চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে।’ এখন সরকার বলছে, ‘না, বাহককে চাহিবা মাত্র দেব না। আমার ইচ্ছা অনুযায়ী দেব।’ এই অবিশ্বাস তৈরি করে ভারত তার মুদ্রাকে বিশ্বদরবার থেকে উঠিয়ে নিল। উচিত হয়নি। আগামীতে নেপাল বা ভুটান যদি ভারতীয় মুদ্রা তার দেশে অচল ঘোষণা করে, তবে অবাক হব না।
দুদিন ছিলাম ভারতে। দুদিনে কেউ কিছু কিনতে পারেনি। হরতালের চেয়ে বড় ধাক্কা খেল ভারতীয় অর্থনীতি। দুদিনে আমার চারপাশে সবার উত্সাহে ভাটা পড়ে গেছে। একজন এসে বলল, ক্যাশ কোথাও নেই। সে তার লুকিয়ে রাখা মাটির ব্যাংক ভেঙে চলছে। পত্রিকায় জানা গেল আরো অসহায় অবস্থা। রোগীরা রাস্তায়। হাসপাতালে যেতে পারছে না। ওষুধ কেনা যাচ্ছে না। এটিএম অচল। হাজার হাজার লোক ক্যাশের জন্য লাইন দিচ্ছে। বহু সাধারণ আয়ের গৃহবধূ বিপাকে। সংসারের টাকা বাঁচিয়ে জমিয়েছে মেয়ের বিয়ের জন্য। স্বামীকে বলেনি খরচ করে ফেলবে কিংবা মদ খাবে। কিন্তু এবার? সব ফাঁস হয়ে গেছে। সংসার ভেঙে যাচ্ছে! কোথাও কোথাও মানুষ আত্মহত্যাও করেছে। ট্যাক্সি বন্ধ। কেউ টাকা ফেরত দিচ্ছে না। খুচরা নেই। ১০ টাকার আইসক্রিম কিনতে গিয়ে বিপদ! কেউ ভাংতি দেয় না। ভুটানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দুদিনই আমাদের সঙ্গে ছিলেন। বললেন, ‘আমার সমস্যার আপাতত সমাধান হয়েছে।’ ভুটানের দূত তাকে ক্যাশের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। গর্ব করে দেখালেন ২ হাজার রুপির চকচকে নোট। একজন বলল, ‘ভালো, কিন্তু কী করবেন এ দিয়ে?’ অবাক চোখে তাকালেন— ‘কেন?’ ‘কেউ ভাংতি দেবে না। যেখানে যাবেন ২ হাজার রুপিই দিতে হবে। ২ হাজার রুপিতে যা পাবেন তার সবগুলোই কিনতে হবে। তুঘলকি কাণ্ড!’
সংবাদ মাধ্যম আরো কিছু মজার সংবাদ দিয়েছে কয়েক দিনে। ভারতের একটি রাজ্যের একজন এমপি তার সব টাকা বিলিয়ে দিয়েছেন ভোটারদের মাঝে। বলেছেন, যেদিন পারো সেদিনই ফেরত দিতে পারবে। কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। স্পষ্টত তার কাছে প্রচুর ক্যাশ ছিল। যার সবগুলোই এখন অর্থহীন। ভোটাররা যদি ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা ওঠাতে পারেন, তবে তাদের উপকার হবে। ফেরত দিলে ভালো আর না দিলে? তারা অন্তত তাকে ভোট তো দেবে?
লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
পরিচালক, এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট
পাঠকের মতামত