সম্পাদকীয়
আমি ও আমরা— বিশ্বায়নের অর্থনীতি
ভারতের মিরাটে গিয়েছিলাম একটি সম্মেলনে। সম্মেলনের বিষয়বস্তু ছিল— বিশ্বায়ন ও সুখ। বিশ্বায়নের ফলে সুখ বাড়ে না কমে, তার আলোচনায় এতটা উত্সুক্য ভাবতে পারিনি। ৬০টি বা তারও বেশি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়েছিল। সবার কথায় একই সুর— বিশ্বায়নের ফলে আমরা ভালো নেই। বলা বাহুল্য, প্রাবন্ধিকদের অধিকাংশই ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা গবেষণারত ছাত্রছাত্রী। তাদের আলোচনায় জানা গেল, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় ভারত তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে। অর্থাত্ এর ফলে ভারত ক্রমে পশ্চিমা ধাঁচের আর্থসামাজিক অবস্থায় চলে যাচ্ছে। ভারত তার সহজাত স্বকীয় সংস্কৃতি হারাচ্ছে; লোভ, লালসা বাড়ছে। মানুষ ক্রমে দুর্বৃত্তে পরিণত হচ্ছে। নিজের ভালো ছাড়া কিছুই বুঝতে চাইছে না। সমাজ, ধর্ম কিংবা সংস্কৃতি কিছুই ঠিক থাকছে না। কেউ কেউ বললেন যে, বিশ্বায়নের ফলে শিক্ষায় দুর্বৃত্তায়ন হচ্ছে। শিক্ষা পণ্যে রূপায়িত হচ্ছে। ফলে চিরাচরিত ভারতীয় কৃষ্টি যেমন— ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক লোপ পাচ্ছে। বাজার ব্যবস্থা সম্প্রসারণ হওয়ায় বাড়ছে দূষণ। নদী-নালার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। গাছপালা ধ্বংস হচ্ছে আর সেই সঙ্গে লোপ পাচ্ছে মনুষ্যত্ব। মানুষ ক্রমে অমানুষে পরিণত হচ্ছে।
ভুটানের এক বিজ্ঞ বক্তা বললেন, এজন্যই আমাদের রাজা জাতীয় উত্পাদন সম্পর্কে এতটা নেতিবাচক। তাই তিনি বলেছেন, আমাদের জাতীয় লক্ষ্য জাতীয় উত্পাদন বৃদ্ধি নয়, জাতীয় সুখের বৃদ্ধি। তার মতে, উত্পাদনের মাত্রা অর্থনীতির ভাষায় একটি টাকা। আর সুখের মাত্রা চারটি। সুখ আসে অর্থে, সংস্কৃতিতে, পরিবেশে আর সুশাসনে। অর্থাত্ আপনি বিত্তে বড় হলেও চিত্তে বড় নাও হতে পারেন। যেমন ধরুন, আমাদের আর্থিক বৃদ্ধি ঘটল কিন্তু আমরা ভাষা হারিয়ে ফেললাম, ভাঙা ভাঙা ইংরেজি টানে বাংলা বলতে থাকলাম (আমাদের দেশের কয়েকটি এফএম রেডিও স্টেশনের মতন)। তখন কি জাতি সুখে থাকবে? কিংবা ধরুন, আমাদের আর্থিক উন্নতির ফলে নদীনালা নষ্ট হলো কিংবা বাতাস দূষিত হয়ে গেল। নাক দিয়ে নিঃশ্বাসের সঙ্গে অক্সিজেনের সঙ্গে নিচ্ছেন ধুলাবালি, বাড়ছে হাঁপানি, আমাদের সুখ কি বাড়বে? কিংবা আমাদের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল দেশে সুশাসনের অভাব হচ্ছে। অর্থাত্ আমরা শাসিত হচ্ছি নিজেদের ভোটাধিকারে নয়, অন্য কোনো রাষ্ট্র কিংবা সংস্থার ইচ্ছায় দেশ শাসিত হচ্ছে, তখন কি আমরা সুখে থাকব?
উত্তরোত্তর প্রবৃদ্ধি গণনা কিংবা দেশের শনৈঃশনৈ উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও কেন তাহলে লোকে অন্য দলের প্রার্থীকে ভোট দেয়? বিষয়টি ভাবিয়ে দেয়ার মতো। তাহলে কি জাতীয় উত্পাদন বিষয়টি আদৌ কিছু তথ্য দেয়? দেখতে পাবেন বিশ্বে বহু দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় সরকার ভোটের আস্থায় ভূপাতিত হয়। সব মিলিয়ে বুঝতে পারলাম যে, আমাদের অর্থনীতিবিদদের অবস্থা সংকটাপন্ন। সম্মেলনে অধিকাংশ বক্তাই অর্থনীতিবিদদের বিপক্ষে, তবে সুখের পক্ষে। সবারই ধারণা, উন্মুক্ত বাণিজ্যিক ব্যবস্থা বিশ্বকে এক নতুন সংকটে ফেলেছে। ট্রাম্প, ব্রেক্সিট কিংবা ভারতে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর বিপক্ষে আঞ্চলিক দলগুলোর প্রভাব সবই যেন উন্মুক্ত বাণিজ্যের যবনিকা টানছে। আর এর সব দায় অর্থনীতিবিদদের। কারণ অর্থনীতিবিদরাই বলেছেন, মুক্ত বাণিজ্য বিশ্বকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যায়।
এমন যখন অবস্থা, তখন আমার ডাক পড়ল প্যানেল বক্তৃতা দেয়ার জন্য। আমার দায়িত্ব অর্থনীতিতে বিশ্বায়ন ও সুখ বিষয়টির স্বরূপ কী, তা তুলে ধরা। আমার অবস্থা আপনারা আন্দাজ করতে পারেন। সম্মেলনে আমার সঙ্গে আন্তর্জাতিক কয়েকজন বিশেষ বক্তা ছিলেন, যারা এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ইরান, নেপাল ও বাংলাদেশ থেকে। তাদের একজন ছিলেন এনজিও কর্মী, একজন বৌদ্ধ পুরোহিত, একজন পরিবেশবিদ, একজন শিক্ষাবিদ, একজন চলচ্চিত্র পরিচালক। যাহোক, সম্মেলনের অবস্থা দেখে ভাবলাম— আমি অর্থনীতিবিদ তাই আমার বিপদ বেশি। অর্থনীতিকে কি সঠিকভাবে চিত্রায়ণ করতে পারব? একটা সুবিধা ছিল যে, আমার পরিচিতিতে তারা আমাকে পরিবেশ অর্থনীতিবিদ হিসেবে উপস্থাপিত করলেন। আমার আজকের লেখাটি একজন অর্থনীতিবিদের কৈফিয়ত বলে ভাবলে ভুল হবে। আমার লক্ষ্য অর্থনীতিতে আমার স্বল্প জ্ঞানের পরিসরে বিষয়টি পরিষ্কার করা।
বক্তৃতার প্রারম্ভেই বললাম যে, আমার উদ্দেশ্য অর্থনীতিকে রক্ষা করা নয়, আমার উদ্দেশ্য অর্থনীতির ভাষাকে স্পষ্ট করা। অর্থনীতির প্রধান উপজীব্য হলো— উপযোগিতা। অর্থনীতিবিদরা সবসময়ই বলে আসছেন, আমরা যা কিছুই করি, তা আমাদের উপযোগিতা বৃদ্ধির স্বার্থে করে থাকি। আমি যদি বুঝতে পারি যে, মিথ্যা কথা বলে আমার জীবনের উন্নতি সাধন করতে পারব। তবে অর্থনীতির নিয়মে তা-ই সই। তা ধরেই আমি আমার আচরণ প্রকাশ করব। এইটুকুতে আপনাদের সঙ্গে আমি একমত। এ রকম একটি সংকীর্ণ ধারণার ওপর বিশ্বাস করেই মানুষ তার আচরণ পরিচালিত করে। আমাদের কাজ এ আচরণকে প্রভাবিত করা, যাতে সমাজে সুখের প্রসার হয়। ব্যক্তির সংকীর্ণ এ মনোভাবকে ধরেই অর্থশাস্ত্রে প্রমাণ করা হয়েছে যে, সংকীর্ণ মনোভাব থাকা সত্ত্বেও যদি বাজার ব্যবস্থা প্রতিযোগিতামূলক হয়, তবে সমাজে কল্যাণ বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির স্বার্থেই আমরা বলি যে, বাজার যত বিস্তৃত হবে প্রতিযোগিতা ততই বাড়বে, তাতেই সার্বিক কল্যাণ সাধন হবে। কল্যাণ অর্থনীতির এই সূত্র ধরেই আধুনিক বিশ্বায়নের যাত্রা। আর এর বিরোধিতা প্রতিটি দেশে হয়েছে। আপনারা আজ যা বললেন, তার সঙ্গে ভিন্ন কারণে হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল শহরের প্রথম বিশ্বায়ন সম্পর্কিত সম্মেলনে যে প্রতিবাদ হয়েছিল, তার সঙ্গে গুণগত কোনো পার্থক্য নেই। পরিবর্তন সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। তবে প্রশ্ন হলো, পরিবর্তনের মুখ্যজন কে? যদি বলেন অর্থনীতির ভাষায় আমি অর্থ ‘আমি’ তাহলে আমি অস্বীকার করব না। আমাদের আসল কাজ এই ‘আমি’-কে খুঁজে বের করা।
আমি’টা কে? আমরা যদি আমি বলতে কেবল আমাকেই ধরি, তবে ‘আমার’ সুখ আর কারো জন্য নয় সবই আমার জন্য। এখানে আমার সংজ্ঞাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘আমার’ সংজ্ঞায় ‘আমার পরিবার’ ঢুকে পড়লেই দেখবেন আমার উপযোগিতা বৃদ্ধি মানে আমার পরিবারের উপযোগিতা বৃদ্ধি। তখন দেখবেন মায়ের অসুস্থতায় সন্তান বিদেশ থেকে সব ছেড়েছুড়ে দেশে চলে আসে। ‘আমার’ সংজ্ঞায় ‘আমার গ্রাম’ ঢুকে পড়লে দেখবেন নিজের গ্রামের কোনো অপমান সহ্য হবে না। কেউ আমার গ্রামকে অপমানিত করলে কিংবা গ্রামকে তাচ্ছিল্য করলে আমরা রেগে যাই, মারামারি করি। ‘আমার’ সংজ্ঞায় ‘আমার ধর্ম’ অন্তর্ভুক্ত হলে দেখবেন আমার ধর্মকে কেউ তুচ্ছ করলে আমি তেড়ে উঠি। আমি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ি। প্রাণহানি হয়। আবার ‘আমার’ সংজ্ঞায় ‘আমার দেশ’ হলেই দেখবেন আমরা ভিনদেশীকে শত্রু মনে করি। অমানুষ মনে করি। ট্রাম্পকে দেখুন। সব দেখতে পাবেন।
অথচ দেখুন মানুষ পৃথিবীতে সর্বাজ্ঞেই সঠিক চিন্তাটি করেছিল। আমাদের ধর্মে আমরা ‘আমাদের’কে কেবল মানুষ হিসেবেই চিন্তা করেছি। কোনো ধর্মই মানুষকে কোনো সংস্কৃতির অন্তর্গত করেনি। সর্বপ্রথমই স্বীকার করেছে যে, ধর্ম মানুষের জন্য। ভারতীয়দের জন্য নয়, বাংলাদেশীদের জন্য নয়, পাকিস্তানিদের নয়। ধর্মের মূল প্রতিপাদ্য মানুষ। তাই যত অকল্যাণ, যত মৃত্যু দেখছেন, তার মূলে রয়েছে মানুষ হিসেবে সবাইকে এক করে চিন্তা না করার সংকীর্ণতা। চিন্তার জগতে সব ধর্মই মনে করেছে যে, মানুষ লোভী। তাই লোভ দেখিয়ে ত্যাগকে এগিয়ে নিয়েছে আমাদের সবার ধর্ম। আসুন সুখ নিয়ে কয়েকটি গল্প শুনি।
আমাদের দেশীয় গল্প— টুনাটুনির গল্প। এক রাজার প্রাসাদে বাস করত টুনাটুনি বলে ছোট্ট দুটি পাখি। একদিন টুনা রাস্তায় একটি টাকা কুড়িয়ে পেল। তাতে সে বেজায় খুশি। খুশিতে আত্মহারা হয়ে সে টুনিকে বলতে লাগল— রাজার ঘরে যে ধন আছে আমার ঘরেও সেই ধন আছে। রাজা জিজ্ঞেস করলেন— টুনা কী বলে? উত্তরে সভাসদদের একজন বলল— বলছে রাজার ঘরে যে ধন আছে, তার ঘরেও সেই ধন আছে। রাজা বললেন— যা দেখে আয় কী নিয়ে তার এত গর্ব? দেখা গেল একটি নোট। রাজা বললেন— নিয়ে আয় টাকাটা, ওটা আমারই টাকা, সে নিশ্চয় চুরি করে নিয়েছে! পরদিন দেখা গেল টুনা টুনিকে বলছে— রাজা খুব কিপটে, টুনার টাকায় নজর পড়েছে। শুনে রাজা বললেন যে, টাকাটা ফিরিয়ে দে। পরদিন টুনা বলতে লাগল— রাজা ভয় পেয়ে টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে। তার লক্ষ্য টুনিকে বোঝানো যে, টুনা বেশ শক্তিধর। রাজা শুনে ফেললেন। বললেন— যা ধরে আন বেটাকে, আমি ওকে খেয়ে ফেলব। টুনাকে ধরে রানীদের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। রাজা বললেন— ভালো করে ভেজে দাও বেটাকে, খেয়ে শান্ত হই। রানীরা টুনাকে দেখতে লাগলেন। সুন্দর ছোট্ট পাখি। অমনি এক ফাঁকে টুনা ফুড়ুত্ করে পালাল। রানীরা বেজায় ভয় পেলেন। রাজা টুনা ভাজার জন্য অপেক্ষা করছেন। তার সুখ টুনাকে খাওয়া। রানীরা যুক্তি করে নিজেদের বাঁচানোর জন্য ব্যাঙ ভাজা করে রাজাকে খেতে দিলেন। রাজা মনের ‘সুখে’ ঢেঁকুর তুলছেন, অমনি টুনা হাজির। বলল— কী মজা কী মজা রাজা খেয়েছেন ব্যাঙ ভাজা! রাজা রেগেমেগে আগুন। রানীদের নাক কেটে ফেললেন। যাও বেটা টুনাকে ধরে আনো, আমি আস্তই খাব। যেই কথা সেই কাজ। রাজা আস্ত টুনাকে খেয়ে ফেললেন আর মনের সুখে যেই না ঢেঁকুর তুললেন, তখনই টুনা বের হয়ে গেল। রাজা রেগে গিয়ে এবার আবার তাকে ধরে আনলেন আর সঙ্গে জল্লাদকে পাশে বসিয়ে রাখলেন। বললেন দেখিস, টুনা এবার বের হতে চাইলে এক কোপ মারবে। অতঃপর একই কাণ্ড ঘটল আর জল্লাদের কোপ টুনার গায়ে না পড়ে পড়ল রাজার নাকে। বুঝতেই পারছেন— রাজা টুনাকে ‘আমি’ মনে করেননি। রাজারা যদি প্রজাদের ‘আমি’র সংজ্ঞায় না আনেন, তবে রাজার সুখ বাড়লে প্রজাদের দুঃখ বাড়ে। গণ্ডগোল আমিতে।
দ্বিতীয় গল্প বলি। এটিও ছোটকালে পড়া। আরব্য রূপকথার গল্প। বাগদাদের এক কাজীর দরবারে এক ব্যবসায়ীর ১ লাখ দিরহাম জরিমানা অনাদায়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে। বাহলুল নামের এক ‘পাগল’ তখন একটি বাক্স নিয়ে রাজার কাছে গেল আর বলল— রাজা বেহেশত কিনবেন? দাম ১ লাখ দিরহাম। রাজা পাগলকে দরবার থেকে বিদায় করলেন। সে যাওয়ার পথে তখনো চিত্কার করছে— বেহেশত কিনবেন? বেহেশত? রানী যোবায়দা শুনলেন। তিনি ১ লাখ দিহরাম দিয়ে বাক্সটি নিয়ে গেলেন। রাজা অবাক! রানী এটি কী করলেন? কিছু বললেন না। বলা বাহুল্য, বাহলুল টাকাটা কাজীর দরবারে দিয়ে ব্যবসায়ীকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল। কিছুদিন পর রানীর মৃত্যু হলো। রাজা শোকে মুহ্যমান। তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, রানী স্বর্গে ঘোরাফেরা করছেন। তিনি যেতে চাইলেন কিন্তু রাজাকে আটকে দেয়া হলো। তার কাছে বেহেশতের চাবি নেই। অতি কষ্টে তার ঘুম ভেঙে গেল। সকালে তিনি বাহলুলকে ডাকলেন। বললেন, তাকেও যেন একটি বেহেশত দেয়। বাহলুল পাগল বলল, তার কাছে আর কোনো বেহেশত নেই। বুঝতেই পারছেন সুখের আসল সংজ্ঞা মনে। এই মনকে শান্ত করতেই আমাদের যত চেষ্টা।
আর মনকে শান্ত করার একটি উপায় হলো, মানুষকে তার সব সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠানো। মানুষ যেন কেবল মানুষকে আপন ভাবে। ব্যক্তিকে নয়, মনুষ্যত্বকে আপন করার মাঝেই আমাদের সব সুখের নীড়। আর বিশ্বায়ন একটি প্রক্রিয়া। যার অর্থ হলো, মানুষকে ক্ষুদ্র ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থের ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত করা। আমাদের সমস্যা বিশ্বায়নে নয়। আমাদের সমস্যা আমাদের সংকীর্ণতায়, যার চেতনায় ভুল করে আমরা নিয়ে আসি ধর্মকে, নিয়ে আসি সমাজকে, নিয়ে আসি সংকীর্ণ শিক্ষাকে, নিয়ে আসি বৈষম্যকে। আমাদের বুঝতে হবে যুগে যুগে মানুষ যতটা উদার হয়েছে, ততই আমাদের সমৃদ্ধি হয়েছে।
আজ বৈশ্বিক সম্পর্ক আছে বলেই আমরা ইচ্ছে করলেও কারো ওপর যুদ্ধ চাপাতে পারি না। ক্ষুদ্র দেশ বৃহত্ দেশকে ভয় পায় না। বৈশ্বিক সম্পর্ক আছে বলেই আমরা এখন এক দেশের শিক্ষা অন্য দেশে নিয়ে যাই। বৈশ্বিক সম্পর্ক আছে বলেই আমরা জলবায়ু উষ্ণতা রক্ষায় সবাই মিলে চেষ্টা করি। যুদ্ধ বন্ধ করি। অন্যায়ের প্রতিরোধ করি। আমাদের সমস্যা বিশ্বায়নে নয়, আমাদের সমস্যা আমাদের সমাজে, আমাদের মনে, আমাদের শিক্ষায়। যেখানে আমি বলতে আমরা একটি সংকীর্ণ সংজ্ঞা দিয়ে নিজেদের চিত্রিত করি আর বিশ্বের সবাইকে অমানুষ মনে করি।
লেখক: অর্থনীতির অধ্যাপক, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
পরিচালক, এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট
পাঠকের মতামত