সম্পাদকীয়
সড়ক দুর্ঘটনার সংকট আমাদের পিছু ছাড়ছে না। প্রতিদিন আমাদের সংবাদমাধ্যমে দুর্ঘটনার সংবাদ আসছে। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী দেখা যায়, দুর্ঘটনা কেবল ঢাকায় নয়, সারা দেশে বিস্তৃত। সেদিন আমি যখন ঢাকার ফার্মগেটে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম, বেশ কয়েকজন ছাত্র তাদের অভিভাবক নিয়ে ফুটওভারব্রিজের নিচ দিয়ে ছয় লেনের রাস্তা পার হচ্ছে। তখন চলছিল ট্রাফিক সপ্তাহ, তাই ফার্মগেটে প্রায় ৫০ মিটার দূরে দূরে পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। কেউ তাদের থামাতে সাহস (!) করেনি। অথচ এ শিশুরাই কিছুদিন আগে শিখিয়েছে কী করে রাস্তায় চলাচল করতে হয়!
বিশ্বের একমাত্র একটি শহরেই মানুষ এভাবে ছয় লেনের রাস্তা নির্দ্বিধায় পার হতে পারে। ছয় লেনের রাস্তা কথাটি বললাম এ কারণে যে, ফার্মগেটে ছয়টি লেনে একসঙ্গে কতগুলো গাড়ি চলাচল করে তার চিত্র আপনি কল্পনা করুন এবং চিন্তা করুন এ রকম ব্যস্ত সড়কে রাস্তা পার হতে কী পরিমাণ ঝুঁকি রয়েছে! এখানে রাস্তা পারাপার করলে দুর্ঘটনা আর দুর্ঘটনা থাকবে না। হয়ে যাবে ঘটনা। বেপরোয়া যান চলাচলের জন্য চালক-মালিক সবারই শাস্তি যেমন আমাদের দাবি, তেমনি বেপরোয়া পথচারীদের শাস্তিও প্রয়োজন। শাস্তি বলতে আমাদের মনে সাধারণত আসে জেল কিংবা মৃত্যুদণ্ড। আমরা জানি, দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তা টাকা কিংবা মৃত্যুদণ্ড দিয়ে পূরণ হবে না। মা তার সন্তানকে ফিরে পাবেন না। প্রতিহিংসার অবসান হবে কিনা, তাও আমার জানা নেই। তবে আমরা জানি, আমাদের প্রথম প্রয়োজন দুর্ঘটনা না ঘটানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এজন্যই ট্রাফিক আইন, এজন্যই এত আন্দোলন!
প্রকৃত দুর্ঘটনায় যাওয়ার আগের কিছু দৃশ্য আমাদের সবার নজরে আনা প্রয়োজন। এক মাস আগে আমি আমার বিভাগে যখন ছাত্রদের উপদেশ দিচ্ছিলাম তখন এক ছাত্রীকে হাত বাঁধা অবস্থায় দেখলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ‘হাতে কী হয়েছে?’ ‘স্যার, বাস থেকে পড়ে গিয়েছিলাম।’ বললাম, ‘কোথায়?’ ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সময় নামতে গেলে বাস না থামিয়েই আমাকে নামতে বলেছিল। তাই পড়ে গিয়েছিলাম।’ বুঝলাম দুর্ঘটনা মারাত্মক নয় বলেই তা পত্রিকায় আসেনি বা আন্দোলন হয়নি। এ ধরনের দুর্ঘটনা অতি সহজেই এড়ানো যায়, যদি বাস নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠাতে বা নামাতে পারে। ফুটপাত থাকা সত্ত্বেও লোকজন রাস্তার পাশে লাইন দিয়ে বাসের অপেক্ষা করে। এতে বাসটি রাস্তার পাশ থেকে অনেক দূরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়। শুধু তাই নয়, যেখানে সেখানে বাস পুরোপুরি না থামিয়েই যাত্রীকে নামতে বাধ্য করেন বাস কন্ডাক্টর। শহরের বাসস্ট্যান্ডগুলো লক্ষ করুন। বলতে পারেন ফুটপাত দোকানিদের দখলে, কিন্তু বহু স্থানে তা সত্য নয়। কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম ইন্দোনেশিয়ার বালি শহরে। সেখানে দেখে এলাম এক মজার ব্যবস্থা। বাসের দরজা প্রায় তিন ফুট উঁচু করে রাখা হয়েছে। বুঝতে পারলাম এখানে রাস্তা থেকে কেউ যেন বাসে উঠতে বা নামতে না পারে তার জন্য এ ব্যবস্থা। রাস্তার পাশে নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ডগুলোও লক্ষ করার মতো। নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ডগুলোয় রয়েছে তিন ফুট উঁচু প্লাটফর্ম। যেখানে বাস তার যাত্রী ওঠাতে বা নামাতে পারে। বুঝতে পারলাম শাস্তি ছাড়াও যাত্রীদের নিয়ম মেনে বাসে ওঠানো ও নামানোর ব্যবস্থা তৈরি করেছে তারা। আরো লক্ষ করলাম বাসস্ট্যান্ডগুলোর দুদিকে রয়েছে সিঁড়ি, যার একটি দিয়ে যাত্রী ওঠে আর অন্যটি দিয়ে নামে। সেই সঙ্গে ইচ্ছে করলেই মাঝখানে হুইলচেয়ারে ওঠানো ও নামানোর ব্যবস্থা করা যায়। বাসের দরজা উঁচুতে হওয়ায় যেখানে সেখানে কেউ উঠতে বা নামতে পারবে না। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা বন্ধ করতে পারলে দুর্ঘটনা কমতে বাধ্য।
ঢাকার রাস্তায় ছাত্রদের আন্দোলনের আগে জেব্রা ক্রসিং ছিল না বললেই চলে। নতুন প্রস্তাবিত আইনেও তার নির্দেশনা নেই। বলা হয়েছে ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা ঘটলেই কেবল ড্রাইভারের মৃত্যুদণ্ড হবে। কোনটা ইচ্ছাকৃত আর কোনটা অনিচ্ছাকৃত, তার দায় স্পষ্ট করা প্রয়োজন। একটি সহজ নিয়ম হলো, শহরাঞ্চলে জেব্রা ক্রসিং, বাসস্ট্যান্ড কিংবা রাস্তার বাইরে যেকোনো দুর্ঘটনা ইচ্ছাকৃত বলে আইনে স্পষ্ট করে দেয়া। তাতে শহরে রাস্তা পারাপারে পথচারীদের অধিকার ফিরে আসবে এবং একই সঙ্গে জেব্রা ক্রসিংয়ের বাইরে বা রাস্তায় চলাচলে বা যত্রতত্র রাস্তা পারাপারে পথচারীদের অধিকার সীমিত হবে। পৃথিবীর বহু দেশে দেখবেন পথচারী যখন জেব্রা ক্রসিংয়ে পা দেয় তখন সব চালক থেমে যান। কারণ তারা জানেন, এখানে দুর্ঘটনা ঘটলে চরম শাস্তি পেতে হবে। সব স্থানে দুর্ঘটনার শাস্তি সমান হয় না, তা চালকদের বুঝতে হবে।
বছর কয়েক আগে কাঠমান্ডুতে গিয়েছিলাম। সাধারণত নেপালে গেলে কাঠমান্ডু শহরে থাকা হয় না। কিন্তু এবার ছিলাম শহরে। লক্ষ করলাম বেশ সুশৃঙ্খল যান চলাচল। ট্রাফিক জ্যাম থাকা সত্ত্বেও যান চলাচল এবং বিশেষত পথচারী ও ড্রাইভারদের এমন আচরণ আমাকে বিস্মিত করেছিল। তাই আমার সহকর্মী অনুরাধাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী ব্যাপার, এমন সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা তোমাদের ট্রাফিক পুলিশ কী করে করল? কাঠমান্ডুর ট্রাফিক পুলিশকে ঢাকায় নিলে কাজ হতো!’ অনুরাধা ঢাকা শহর চেনে। হাসতে হাসতে জানাল তাদের মূলমন্ত্র। প্রতিটি বড় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সঙ্গে রয়েছে সভাকক্ষ। যেখানে ১৫-২০ জনকে একসঙ্গে বসানোর ব্যবস্থা রয়েছে (খুব আরামদায়ক ব্যবস্থা নয়)। কোনো পথচারী নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে রাস্তা পার না হলে তাদের এ সভাকক্ষে নিয়ে আসা হয়। তাদের ৩০ মিনিট বসিয়ে রাখা হয় এবং একটি সড়ক দুর্ঘটনার ভিডিও দেখানো হয়। ভিডিওতে দেখানো হয়, নিয়মমাফিক রাস্তা পারাপার না হলে কত ধরনের দুর্ঘটনা হয়। ভিডিওগুলো নানা ধরনের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেয়া। ভিডিওগুলো এতটাই মারাত্মক যে অনেকেই এরপর রাস্তা পার হতে ভয় পায়। পুলিশের সাহায্য নেয় বা জেব্রা ক্রসিং দ্বারা পারাপার হয়। বলা বাহুল্য, এসব পথচারীর অনেকেই সময় বাঁচানোর জন্য ২০০ থেকে ৫০০ ফুট দূরে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপার হতে চায়নি বলেই আইন অমান্য করেছিল। এ শাস্তি তাদের সেই সময় বাঁচাতে দেয়নি। ঢাকায় একসময় রাস্তা পারাপারে জরিমানা চালু করা হলে অনেকেই তার বিরোধিতা করেছিলেন। বেপরোয়া রাস্তা পারাপার একটি অপরাধ।
অনুরাধাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আর ড্রাইভাররা? ওরা কী করে এত সহজে নিয়ম মানছেন?’ বলল, তাদের জন্য রয়েছে একই শাস্তি। তবে তাদের সময় ১ ঘণ্টা। একই ভিডিও দুবার দেখতে হবে। রাস্তা চলাচলে সময়ের চেয়ে বড় জরিমানা আর কিছু নেই। সবাই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটায় কেবল সময় বাঁচানোর জন্য, ড্রাইভার-পথচারী সবাই সময় বাঁচাতে সব অন্যায় করে। তাদের জন্য আর্থিক জরিমানার চেয়ে বড় শাস্তি ‘সময়’। বিষয়টি বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।
রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিং সবচেয়ে সহজ ও কম ব্যয়বহুল ব্যবস্থা। ফুটওভারব্রিজের অসুবিধা হলো, তা বয়স্ক ব্যক্তি বা প্রতিবন্ধীদের জন্য সহায়ক নয়। তার ওপর রয়েছে ফুটওভারব্রিজ দখল বাণিজ্য। প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের সহায়তার জন্য বনানীর একটি ফুটওভারব্রিজে এস্কেলেটর দিয়েও দেখা গেছে জনগণ পুলিশের নাকের ডগায় রাস্তা পার হচ্ছে। আন্ডারপাসের পরীক্ষাও অচল হয়েছে। কারওয়ান বাজারের বাটারফ্লাই আন্ডারপাস তার উদাহরণ। সাধারণ মানুষ ও বিশেষ করে নারীরা অন্ধকার কূপে প্রবেশে ভীত থাকেন। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ওপর ভরসা করা ঠিক হবে না। অথচ জেব্রা ক্রসিংয়ের মতো সহজ, পরীক্ষিত ও টেকসই ব্যবস্থাকে আমরা অবহেলা করছি। যা অর্থের অংকে সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল। তবে বড় রাস্তায় (ছয় লেন বা ঊর্ধ্বের সড়কে) জেব্রা ক্রসিং সাধারণত কার্যকর করতে গেলে সার্বক্ষণিক পুলিশের উপস্থিতির প্রয়োজন হয়। তাই একদিকে শহরে যেমন জেব্রা ক্রসিং বাড়ানো জরুরি, তেমনি রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন। তাদের হাত ট্রাফিক লাইটের বিকল্প হিসেবে নয়, কেবল বেপরোয়া ড্রাইভার ও পথচারী নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা উচিত। তাদের হাত তখনই উঠবে যখন কেউ আইন ভঙ্গ করবে।
সম্প্রতি দক্ষিণ ঢাকার মেয়র একটি ঘোষণা দিয়েছেন। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য তিনি ঢাকা শহরে স্মার্ট ট্রাফিক সিগনালের ব্যবস্থা করছেন। এরই মধ্যে সোলার লাইট, সিসিটিভি ক্যামেরা, বামে যাওয়ার লেন, ডানে যাওয়ার লেন, ইউটার্ন লেন, এমনকি ইউটার্ন লুপ পর্যন্ত কার্যকর করা যায়নি। শুধু তাই নয়, যেখানে ট্রাফিক সিগনাল বলতে কিছু নেই, যেখানে ট্রাফিক পুলিশ ট্রাফিক লাইটের চেয়ে ‘আল্লাহর দেয়া হস্ত’-কে অধিক শক্তিশালী মনে করে, সেখানে স্মার্ট সিগনালিং ব্যবস্থা কী করবে তা ভেবে দেখার মতো। তবে তা বেশকিছু অর্থের অপচয় করবে নিঃসন্দেহে। ট্রাফিক পুলিশকে সঠিক প্রশিক্ষণ না দেয়া পর্যন্ত এ অপচয়ের কোনো মানে হয় না। আমরা এখনো ১৯৫০ সালের ট্রাফিক পুলিশ নিয়ে বসবাস করছি এ দেশে। একইভাবে উল্টো পথে গাড়ি চালানোর কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্টদের অধিকতর শাস্তি পেতে হবে এবং তা ভিআইপিদের জন্যও প্রযোজ্য হবে।
ঢাকা শহর ভিআইপিদের শহর। এখানে প্রতি ঘণ্টায় অসংখ্য ভিআইপি রাস্তায় চলাচল করেন। কারো রয়েছে পুলিশ বাহিনী, কারো রয়েছে মোটরসাইকেল বাহিনী, কারো রয়েছে বিকট হর্ন, কারো রয়েছে ফ্ল্যাগ। সবাই মনে করেন, তারা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাজে রয়েছেন। তাদের চেনা যায় না। জনগণের অধিকার রয়েছে তাদের পরিচয় জানার। কেন তারা ভিআইপি তা জানার। পুলিশ নানা চেষ্টা করেও তাদের নিয়মে আনতে পারেনি। অথচ আমরা সবাই জানি, ট্রাফিক অব্যবস্থার জন্য তারাও দায়ী। যেহেতু তাদের পুলিশ কিছু করতে পারেনি, তাই তাদের পরিচিতি নিশ্চিত করা উচিত। তাদের গাড়ি চিহ্নিত করে তাদের নাম গাড়িতে খোদাই করে দিলে জনগণ তাদেরকে শনাক্ত করতে পারবে। নাম্বার প্লেটের সঙ্গে ভিআইপিদের নাম লেখার প্রয়োজনীয় আইন করা উচিত। তবেই তারা বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারবেন। বেশ কিছুদিন আগের একটি ঘটনা, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে একটি অনুষ্ঠানে আসার কথা। আমরা তার জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি এলেন ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর। এসে ক্ষমা চেয়ে বললেন যে তার হিসাবে ভুল হয়েছে। তিনি ময়মনসিংহ থেকে এ অনুষ্ঠানে এসেছেন। কিন্তু রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম থাকায় সময়মতো পৌঁছতে পারেননি। তিনি জানালেন, রাস্তায় তিনি প্রটোকল ব্যবহার করতে চান না, কারণ তাতে জনগণের অসুবিধা হয়। তাই তার এ বিলম্ব। এমন মানুষ সরকারে থাকতে আর কে কে নিজেদের ভিআইপি মনে করেন তা জনগণের জানা উচিত নয় কি?
অনেকের ধারণা, ভিআইপি কেবল রাজনীতিবিদ বা মন্ত্রী। কিন্তু আসলে তা নয়। অনেকেই এখানে ভিআইপি। দুটো উদাহরণ দিই, ঢাকার অতি ব্যস্ত সড়কের মধ্যে অন্যতম হলো এয়ারপোর্ট সড়ক। এখানে মুহূর্তে ১০০ গাড়ি জমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিছু ভিআইপি রয়েছেন, যারা এ রাস্তার দুপাশ বন্ধ করে গাড়ির সাহায্যে সড়ক ক্রস করেন! বিশ্বাস হয় না? প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ৩০০ ফুট উত্তরে ফুটওভারব্রিজে অবস্থান নিন। দেখতে পাবেন এরা কারা? দ্বিতীয় উদাহরণ হলো, ঢাকার মানিক মিয়া সড়ক। প্রায় ৩০০ ফুটের এ সড়কে রয়েছে ১০টি লেন। সব লেন থাকে গাড়িতে পরিপূর্ণ। কিন্তু সব গাড়িকে থামিয়ে দিয়ে ১০ লেনের রাস্তা গাড়ি করে পার হন অনেকে এবং ট্রাফিক পুলিশ তাদের সহায়তা করে। এ রকম ব্যস্ত সড়ক গাড়ি নিয়ে পার হওয়ার নিয়ম হলো, রাস্তার একদিকে কিছুদূর চলে পরে ইউটার্ন নিয়ে অন্য পাশে যাওয়া, কিন্তু আমাদের ট্রাফিক পুলিশ এ নিয়ম হয়তোবা জানেই না।
ঈদে বাড়ি যেতে আমাদের হেনস্থার চেয়ে বেশি হলো রাস্তার দুরবস্থা। রাস্তার দুরবস্থার ফলেই সব হেনস্থা। সারা বছর রাস্তা মেরামতের পরও এ দুরবস্থা একটি দিকেই সবার নজর কাড়ে। তা হলো দুর্নীতি। সরকারি বাজেটে সড়ক ব্যবস্থায় সরকারের ব্যয় সর্বোচ্চ হওয়া সত্ত্বেও কেন এ দুরবস্থা তা আমাদের বোধগম্য নয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আইনের চেয়ে বেশি সহায়ক কোনো শক্তি নেই। আইন ও অর্থনীতি তাই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যে অর্থ ব্যয় মানুষের উপকারে আসে না, তাকে বলে অপচয়। সঠিক আইনই পারে মানুষের আচরণ পরিবর্তন করতে এবং এর ফলে দেশের আর্থিক অপচয় রোধ করা যাবে। সঠিক আইন ছাড়া স্মার্ট লাইট, স্মার্ট রোড, স্মার্ট ড্রাইভার, স্মার্ট বাস সার্ভিস সবই হবে অপচয়। আশা করি, উদাহরণগুলো আমাদের ধীশক্তি বাড়াবে।
লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও পরিচালক, এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট
পাঠকের মতামত