সম্পাদকীয়
চীন আমাদের অনেকের কাছে একটি বিস্ময়! পৃথিবীর যেকোনো বাজারে যান, যেকোনো সামগ্রী হাতে নেবেন, দেখবেন ‘মেড ইন চায়না’ লেখাটি। ভারতের গণেশ মূর্তি বলুন, মক্কায় তসবি বা টুপি বলুন, রোমে যিশুর ক্রসসহ মূর্তি বলুন, পশ্চিমা শক্তির প্রতীক নাসার ভয়েজার নভোতরীর রেপ্লিকা বলুন, রাশিয়ার ক্রেমলিন চত্বরের রেপ্লিকা বলুন বা ব্রিটিশ রানীর রাজপ্রাসাদ বাকিংহাম প্যালেসের শোপিস বলুন, সবই দেখবেন চীনে তৈরি। ইদানীং মরুভূমিকে কৃষি খামারে রূপায়ণ করার কৌশলও রপ্ত করেছে চীন। খাবারের তালিকায় চীনের জুড়ি মেলা ভার। শুধু তাই নয়, অর্থনীতিবিদ ডেভিড রিকার্ডো বলেছিলেন, পৃথিবীর সব দেশ তার তুলনামূলক সুবিধা অনুযায়ী একে অন্যের সঙ্গে রফতানি ও আমদানি করবে। আর তাতে সবাই লাভবান হবে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্যামুয়েলসন বলেছিলেন, আমদানি-রফতানির অবাধ ও অবারিত সুযোগ থাকলে সব দেশেই শ্রমমূল্য একসময় সমান হয়ে যাবে। অর্থাৎ তখন বাংলাদেশ থেকে আর কেউ আমেরিকায় যাবে না কিংবা বলা চলে, মেক্সিকো থেকে কেউ আমেরিকায় পাড়ি জমাবে না। ১৯৯৪ সালে তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ (সিনিয়র) কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য এলাকা ঘোষণা করেছিলেন। সবই ভেস্তে গেছে! সবার চোখে ধুলো দিয়ে চীন হয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম কৃষি ও শিল্প উৎপাদনের দেশ। আর ট্রাম্প এসে তো সবার চোখে আঙুল দিয়ে বলেছেন, অবাধ ও অবারিত বাণিজ্যনীতির ফলে মেক্সিকো থেকে অভিবাসীর আগমন থামেনি কিংবা চীন কৃষি উৎপাদনে থেমে থাকেনি। চীন এখন কেবল কৃষিপণ্য রফতানি নয়, শিল্পপণ্যেও তার একচেটিয়া অধিকার ধরে রেখেছে।
শুধু তাই নয়, পশ্চিমা মুলুকের প্রাণ ধী-শক্তিতেও তারা এখন টেক্কা দিতে চাইছে। ফলে প্রায় ৭০ বছর পর পশ্চিমা শক্তি আবারো চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ যুদ্ধের প্রাথমিক রসদ জোগান দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড, কানাডা, ইউরোপ এবং ভারত পরোক্ষভাবে এ যুদ্ধের উপকরণ তৈরি করছে। সবার ভয় এখন চীনকে নিয়ে।
আমার কাছে চীনের বিস্ময় অন্যত্র। পৃথিবীতে চীন অনেক রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। সিরামিককে আমরা চীনামাটি বলি, কারণ তা এসেছে চীন থেকে। নদী শাসন করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ পৃথিবীকে শিখিয়েছে চীন। বারুদের ব্যবহার চীনের আবিষ্কার। পেট্রলের ব্যবহারও চীন শিখিয়েছে। দেয়াললিখন শেষ করে চীনই প্রথম কাগজের ব্যবহার শিখিয়েছে। আমার কাছে আরো একটি বিস্ময় আছে। ভারত উপমহাদেশে কেবল বাংলাদেশের নামই চীনা ভাষায় রয়েছে। ভারতকে (বা হিন্দুস্তান) তারা বলে ইন্দু, পাকিস্তানকে বলে বাজিসিতান, শ্রীলংকাকে ডাকে সিলিলংকা, কিন্তু বাংলাদেশকে বলে মনজালা। শব্দ হতেই বুঝতে পারছেন, কেবল আমাদের জন্যই চীনের একটি পৃথক শব্দ রয়েছে, বাকিগুলো মূলত শব্দানুবাদ। কেন আমাদের জন্যই তাদের শব্দভাণ্ডারে একটি পৃথক শব্দ রয়েছে, তা এখনো রহস্যময়। তবে আমাদের দেশে তাদের বিচরণ বহুশত বছর আগে হয়েছে। পুরনো চাইনিজ সিল্ক রুটের একটি ছিল গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদীপথে। তাই তো দেখবেন, এ দুই নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল প্রাচীন বেশকিছু নগরী; যার নমুনা পাবেন উয়ারী-বটেশ্বর, মহাস্থানগড় কিংবা বিক্রমপুরে। দ্বাদশ শতকে চীনের ইউনান প্রদেশ থেকে বাংলাদেশে স্বর্ণ বা রুপার চালান আসত গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদীপথে। চীন এখনো বিশ্বের প্রধান স্বর্ণ উৎপাদনকারী দেশ।
সবই বললাম মূলত ২০১৩ সাল থেকে আধুনিক চীনের নতুন সিল্ক রুটকে কেন্দ্র করে। অর্থাৎ প্রাচীনকালে ভারত ও চীন যখন সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল, তখন চীন ভারতের (বাংলাদেশসহ) সঙ্গে মূলত বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধির জন্য স্থল ও নৌপথের রুট তৈরি করেছিল। আর চীন-ইউরোপ বা চীন-তুর্কি বা চীন-ইরান পর্যন্ত যে স্থলপথ দিয়ে চীন অগ্রসর হয়েছিল, তা ব্যবহার হয়েছিল বাণিজ্য ও সাম্রাজ্য প্রসারে। ভারতে চীন দুটো পথে এসেছিল— একটি কাবুল হয়ে আর অন্যটি ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা ধরে। প্রথমটির উদ্দেশ্য ছিল সাম্রাজ্য বিস্তার, আর তা ছিল রক্তাক্ত। আর দ্বিতীয়টির উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্য ও জ্ঞানার্জন। তাই তো আচার্য অতীশ দীপংকর পাড়ি দিয়েছিলেন তিব্বতে ধর্মীয় শিক্ষাবিস্তারে। চীনারা তাকে অতিসম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেছিল। ফলে সেখানে এখনো দেবদেবীর নাম দেখলে চমকে যাবেন। উলানবাটোরে এক জাদুঘরে এক দেবীর নাম দেখতে পেলাম ‘শ্রীদেবী’। আমার অনুবাদক বোঝাতে চাইলেন যে শ্রীদেবী অত্যন্ত সুন্দরী ও এক শক্তিশালী গডেস। আর আমি মুচকি হাসছিলাম। কারণ অনুবাদ ছাড়াই আমি তার অর্থ বুঝতে পারছি। বুঝতেই পারছেন বাংলা ভাষারও বিচরণ ছিল সেখানে আচার্য অতীশ দীপংকরের কারণে, আমাদের সভ্যতার বিস্তার ছিল সুদূর চীন পর্যন্ত।
যা বলছিলাম, ১৯৯০ সালে চীনের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল কাজাকাস্তান স্থলবন্দরের প্রতিষ্ঠা। পৃথিবীর বহু বিশেষজ্ঞ তখন হেসেছিলেন। কাজাকরা কীভাবে স্থলবন্দরে জাহাজ আনবে? ২০০৮ সালে প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ট্রেন চালু করে কাজাকরা তাক লাগিয়েছিল। চীন থেকে পণ্য ট্রেনে করে শেষ পর্যন্ত মস্কো বা জার্মানির ডুইসবার্গ পর্যন্ত চলাচলের মাধ্যমেই সম্ভবত চীন আবারো নতুন সিল্ক রুট চালু করেছিল। ২০১৩ সালে চীন প্রথম ঘোষণা দিয়ে সিল্ক রুট চালু করে এবং শুধু ইউরোপ নয়, তেহরানকেও অন্তর্ভুক্ত করে। ঘোষণার পর পরই দেখা গেল পরিবর্তন। চীনা অর্থনীতি ক্রমে শক্তিশালী হয়ে উঠছে দেখে অনেকেই শঙ্কিত হন। ইউরোপ-পশ্চিম এশিয়া এমনকি ভারতও, যারা একসময় চীনা শক্তির কাছে নত হয়েছিল, তাদের মনে ভয় বা শঙ্কা আসে। তবে এ ভয় সৃষ্টির মূল প্রবক্তা যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ইতিহাসের পাতায় তাদের সময় নির্ধারণ হয়ে গেল। শত বছরেও যে আফ্রিকাকে ইউরোপ বা আমেরিকা দাঁড়াতে দেয়নি, চীন সেই আফ্রিকার প্রায় ১১টি দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে উৎসাহী হয়। উদ্দেশ্য? একই ইউরোপ বা আমেরিকা আফ্রিকাকে খনিজ দ্রব্যের আধার হিসেবে বিবেচনা করে এসেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল খনিজ দ্রব্যের সব বাজার হবে ইউরোপ বা আমেরিকাকেন্দ্রিক। তাই আফ্রিকা মহাদেশের শ্রেষ্ঠ সমুদ্রবন্দর তৈরি করেছিল পশ্চিম কূলে, আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে। প্রতিযোগিতার ফলে এসব দেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসে। কেনিয়ায় যখন ট্যাক্সি ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এত সুন্দর রাস্তা কারা তৈরি করেছে? হেসে গর্বের সঙ্গে বলেছিলেন, চীনারা। তার ভাষায়, চীনারাই পারে সবচেয়ে ভালো রাস্তা তৈরি করতে। সত্য বা মিথ্যে জানি না, তবে একজন ড্রাইভারের চোখও দেখেছিল চীনকে তাদের উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে। চীন আফ্রিকার দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিল। ঘানা থেকে মোম্বাসা পর্যন্ত নতুন মহাসড়ক নির্মাণ করে দিল, আর ভারত মহাসাগরকূলে মোম্বাসাকে তৈরি করল আধুনিক সমুদ্রবন্দর হিসেবে। ফলে ইউরোপ, আমেরিকার একচেটিয়া খনিজ পণ্যের বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হলো। আমেরিকা শঙ্কিত হলো।
একই সময়ে চীন অনুধাবন করল, বাণিজ্য সম্প্রসারণে তাদের আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে। মার্কিন মূলুক ও যুক্তরাজ্য কিছুটা আহত হয়েছে। তাদের কদর ক্রমে কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে ওবামা প্রশাসনের সময় থেকেই মার্কিন মুলুকে চীনা ছাত্রদের আধিপত্য কমতে শুরু করেছে। তাদের স্থান দখল করেছে ক্রমে ভারত। এইচওয়ানবি ভিসার প্রায় ৯০ শতাংশই এখন ভারতীয়। ফলে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কিছুটা হলেও উন্নতির দিকে। অন্যদিকে আশির দশকে একটি শিশু একটি পরিবার নীতি গ্রহণের ফলে চীনের শ্রমশক্তিতে পরিবর্তন এসেছে। প্রতি পরিবারে একটি শিশু জন্ম নেয়ায় অভিভাবকরা তাদের প্রতি অধিক মনোযাগী হয় এবং তাদের শিক্ষায় অধিক বিনিয়োগ করতে থাকে। ফলে অধিকতর শিক্ষাগত যোগ্যতার কারণে নতুন শ্রমিকরা পুরনো শ্রমিকের কাজ করতে কম আগ্রহী হন। শিল্প শ্রমিকের অভাব তৈরি হওয়ায় চীন ক্রমে উচ্চতর শিল্প, যেখানে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়, সে রকম শিল্পে আগ্রহী হয়। তৈরি হয় চীনা ব্র্যান্ড। চীন ক্রমে শুধু ব্র্যান্ড নয়, চীনা ডিজাইন বাজারে অন্যদের স্থান দখল করতে থাকে। হুয়াওয়ে কিংবা ডংগফেংগ ক্রমে শুধু যে চীনা ব্র্যান্ড হয় তা নয়, তাদের নিজস্ব ডিজাইন বাজারে অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে থাকে। মার্কিন শঙ্কা আরো বেড়ে যায়। সৃষ্টি হয় স্নায়ুযুদ্ধ। এ যুদ্ধের নতুন হাতিয়ার পত্রিকার পাতা নয়, তা হয় কম্পিউটার বা ভার্চুয়াল জগৎ। প্রতিনিয়ত তৈরি হয় অসংখ্য ভিডিও বা ব্লগ। এর কোনোটি সত্য, কোনোটি কাল্পনিক। এ যুদ্ধের মূল লক্ষ্য চীনের শক্তিকে খাটো করা।
তাই দেখতে পাবেন পানামা খাল খনন করে তার দখল রেখে দেয়ার পরও সংবাদমাধ্যমগুলো যখন যথার্থই নীরব, তখন শ্রীলংকার হাম্বনটোটা বন্দর প্রতিষ্ঠার পর তার বিনিয়োগের অংশ হিসেবে যখন বন্দরের আর্থিক ক্ষতির ভার চীন নিজ হাতে তুলে নিল, তখন তাকে ঋণজাল বলে ব্যাপক প্রচার করা হয়। ঋণ আর বিনিয়োগের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগকে ঋণ হিসেবে দেখিয়ে তাকে জাল বলে দেখানো হচ্ছে বহু প্রচারমাধ্যমে। পাকিস্তানে সিপেক করিডোরে চীন বেলুচিস্তানের গোয়াদার সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠা করে চীনের পশ্চিমাঞ্চলকে সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রচারে গণমাধ্যমগুলো পিছপা হচ্ছে না। অথচ কেউ স্পষ্ট করে বলছেন না, ৬৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মাত্র ২০ বিলিয়ন ঋণ অবশিষ্ট হলো বিনিয়োগ। ঋণ ও বিনিয়োগের প্রাথমিক পার্থক্য হলো, ঋণগ্রহীতাকে ঋণ সুদসহ ফেরত দিতে হয়। আর বিনিয়োগ মানে হলো, বিনিয়োগকারী লাভ-ক্ষতির অংশীদার হবে। শ্রীলংকায় চীনের বিনিয়োগ যখন ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তখন চরম সমালোচনার মুখে শ্রীলংকার সরকার পোর্টটি চীনের হাতে তুলে দেয়। বলতে পারেন, তাতে চীন কি লাভ করবে? নিশ্চয়ই না। তবে আমার মতে, শ্রীলংকার সরকার বা জনগণ যা দেখতে পায়নি, চীন তার দূরদৃষ্টি দিয়ে তা দেখতে পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারত, বাংলাদেশ কিংবা শ্রীলংকা পণ্য আমদানি করে সিঙ্গাপুর বন্দর থেকে। অর্থাৎ বড় জাহাজগুলো প্রথমে সিঙ্গাপুর যায়, অতঃপর তা ফেরত আসে দক্ষিণ এশিয়ায়। তাতে আমাদের অতিরিক্ত মাশুল গুনতে হয়। গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় এমন বৃহৎ ও গভীর সমুদ্রবন্দর নেই বলেই আমাদের তা করতে হয়। আগামী দিনে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যকেন্দ্র হবে হাম্বনটোটা সমুদ্রবন্দর, তবে যদি শ্রীলংকা সরকার সিঙ্গাপুরের মতো ফ্রি পোর্টের নিয়মগুলো চালু করতে পারে। আর যদি তা হয়, তবে যে শুধু শ্রীলংকা লাভবান হবে তা নয়, লাভ করবে গোটা এশিয়া। দীর্ঘ ৭০ বছরেও বিশ্বব্যাংক এ স্বপ্ন দেখেনি। কারণ তারা ঋণ দিতে অভ্যস্ত, বিনিয়োগে নয়। একই কথা আমাদের পদ্মা সেতুর বেলায়ও সত্য। ঋণ আর বিনিয়োগের মধ্যে পার্থক্য করতে না পারাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ঋণ হিসেবে পদ্মা সেতু হয়তোবা ভালো মনে হয়নি, কিন্তু বিনিয়োগ হিসেবে তা বাংলাদেশের মানচিত্র বদলে দিতে পারে যদি তা সঠিকভাবে লালন করা হয়।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগকে কেবল সড়ক, নৌ কিংবা বন্দর উন্নয়ন হিসেবে দেখলে ভুল করা হবে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে আসছে চীনের বিনিয়োগ অবকাঠামো। যার আওতায় তৈরি করা উচিত অন্যান্য সম্পূরক অবকাঠামো। যেমন— চীনের বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য চীনা ব্যাংকের উচিত বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড যদি আসতে পারে, তবে চীনা ব্যাংক কেন নয়? আসতে পারে চীনের ব্যবসা অবকাঠামো, যেমন— আলিবাবা, ইউনিয়ন পে, আলি পে, উইচ্যাট মানি ইত্যাদি। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন যদি আসতে পারে, তবে কেন উইচ্যাট নয়? যদি ভিসাকার্ড আসতে পারে, তবে ইউনিয়ন পে কেন নয়? যদি আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স আসতে পারে, তবে চায়না লাইফ কেন নয়? প্রতিযোগিতা প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে লাভবান করবে।
আমেরিকান বিমানবন্দরে গিয়ে দেখতে পাবেন চীনা ইউনিয়ন পের এটিএম। অতএব তাকে সাব-স্ট্যান্ডার্ড বলে উড়িয়ে দেয়ার সময় এখন আর নেই। চীন ক্রমে বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে। আর সে সুযোগ দক্ষিণ এশিয়ায় কেবল নিতে পারবে বাংলাদেশ। সর্বশেষে, পৃথিবীর বহু দেশ বাংলাদেশীদের দেখে অবজ্ঞার চোখে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পর্যটক যাতায়াত করে, বাংলাদেশ ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম রেমিট্যান্স সরবরাহকারী দেশ এবং ভারতের হাসপাতালগুলোয় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রোগী বাংলাদেশই পাঠায়। তা সত্ত্বেও ভারত আমাদের বিনা ভিসায় ভ্রমণ করতে দেয় না। অথচ চীন বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা চালু করেছে। এ উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই এবং আশা করি, বাংলাদেশ সরকার ও ব্যবসায়ীরা এ সুযোগ আরো সংহত করার জন্য প্রয়োজনীয় অন্য নিয়মনীতি চালু করবে। বিষয়গুলো নিয়ে প্রয়োজনীয় গবেষণা করে তার ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত। তবেই কেবল আমাদের ভীতি দূর করা যাবে। আগামী বছরে তা-ই হোক আমাদের লক্ষ্য।
লেখক: অর্থনীতিবিদ; এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ও অধ্যাপক, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
পাঠকের মতামত